আমরা প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্রাউজ করি এবং বিভিন্ন ওয়েব সাইট ভিজিট করি। এই ইন্টারনেটে কতো বিচিত্র ওয়েব..
বর্তমান যুগে আমরা ৬-৭ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে পারি অথবা সারারাত না ঘুমিয়ে থাকতে পারি । অথচ ইন্টারনেট ছাড়া আমরা একটা মুহূর্তও থাকতে পারি না । কিন্তু আপনার কি কখনো মনে হয়নি যে ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে , কিভাবে এটি আমাদের ডিভাইস পর্যন্ত আসে অথবা এই ইন্টারনেটের মালিক কে, কে পরিচালনা করে ইন্টারনেট ?
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত । কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন কিভাবে ইন্টারনেট আপনার হাতে পৌছায় ? সাধারনভাবে আমরা মনে করি ইন্টারনেট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে। কিন্তু বাস্তবটা একেবারে ভিন্ন। শতকরা ৯৯ ভাগ ইন্টারনেট কাজ করে অপটিক্যাল ফাইবারের সাহায্যে। এই অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে অত্যন্ত সরু কাঁচের তন্তু বিশেষ। যেটা মানুষের চুলের থেকেও সরু। এখন আপনাদের মনে এটা আসতে পারে যে, মোবাইল ব্যবহারের সময়তো আমাদের মোবাইলে কোনো ধরনের ক্যাবল সংযুক্ত থাকে না। তাহলে আমি কেনইবা ক্যাবলের কথা বললাম। আসলে বিষয়টা হচ্ছে যে নেটওয়ার্ক টাওয়ার থেকে আপনার মোবাইলে নেটওয়ার্ক আসে, সেই টাওয়ার থেকে আপনি যে ওয়েব সার্ভার ব্রাউজ করছেন সেখানকার সার্ভার পর্যন্ত ক্যাবল বিছানো থাকে। এবার আপনাদের বিস্তারিত বলবো যে কিভাবে আর কোন কোন ধাপে ইন্টারনেট কাজ করে। ইন্টারনেট আমাদের কাছে আসে মূলত ৩ টি ভিন্ন ভিন্ন স্তরে । এই ৩ টি স্তরকে বলা হয় –
১. Tier 1 ২. Tier 2 ৩. Tier 3
১. Tier 1
এই স্তরের মধ্যে যেসব কোম্পানীগুলো রয়েছে তারা নিজস্ব অর্থায়নে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে জালের মত ক্যাবল বিছিয়ে রেখেছে। এই ভাবেইে একটি দেশ থেকে অন্য একটি দেশে যু্ক্ত হয়ে যায়। তারপর দেশ থেকে বিভিন্ন প্রদেশ বা জেলায় এই অপটিক্যাল ফাইবারগুলো বিভক্ত হয়ে যায়। সেখান থেকে আপনার এলাকার Tower-এ সেই সংযোগ পৌছায় এবং সেখান থেকে আপনি ক্যাবলবিহীন নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সংযোগ পেয়ে থাকেন। একটি ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের তার চুলের মতো সরু হলেও এদের ডাটা ট্রান্সফার ক্ষমতা ৬ Gbps অর্থাৎ সেকেন্ডে ৬ জিবি ডাটা ট্রান্সফার হয়। যার গতি আলোর গতির চেয়েও বেশী। বাংলাদেশে একটি Tier 1 কোম্পানী হচ্ছে “বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পনী লিমিটেড” । আপনি www.submarinecablemap.com – এ বিশ্বের ক্যাবল সংযোগ স্থলগুলো দেখতে পারবেন। বাংলাদেশে এর দুটি স্থল রয়েছে, একটি হলো কুয়াকাটা অন্যটি কক্সবাজার। এখন আপনি যদি কোন ওয়েব সাইট ভিজিট করেন এবং সেটির সার্ভার যদি অন্যকোন দেশ হয়ে থাকে। তাহলে আপনার সমস্থ ডাটা এবং ট্রাফিক পাওয়ারের মাধ্যমে এই ল্যান্ডিং পয়েন্টের মাধ্যমে সেই নির্দিষ্ট সার্ভারে পৌছাবে এবং পুনরায় সেই সার্ভার থেকে আপনার ডিভাইসে পৌছাবে।
২. Tier 2
এই কোম্পানিগুলো Tier 1 ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে পরবর্তীতে ক্যাবলের মাধ্যমে নিজেদের কানেকশন পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়। যেমন- বাংলাদেশের ক্ষেত্রে Grameenphone, Robi, Banglalink, Airtel, Teletalk ইত্যাদি। এরা প্রতি জিবি তে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা Tier 1 কোম্পানীকে দিয়ে থাকে।
৩.Tier 3
এই কোম্পানীগুলো হলো লোকাল পর্যায়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা ISP । যেমন- WiFi Connection প্রদানকারী কোম্পানীগুলো।
মূলত Tier 1, Tier 2, Tier 3 এই ৩ টি স্তরে ইন্টারনেট আমাদের হাত পর্যন্ত পৌছায়। একটু ভাবলেই বুঝা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন খরচ নেই। যা আমরা দেই তা শুধুমাত্র এর ক্যাবল বিছানো এবং এর মেরামত করার জন্য। আর এতো কিছুর মাধ্যমে আমরা এটাই বুঝতে পারছি যে এখানে স্যাটেলাইটের কাজ নেই বললেই চলে।। ইন্টারনেট এই ক্যাবলের মাধ্যমেই আমাদের হাতে পৌছায়।
সুতরাং ইন্টারনেটের কোন মালিক নেই। এটা সম্পূ্ণ ফ্রি, যা খরচ হয় এবং যা আমরা কোন নির্দিষ্ট অপারেটরকে দেই তা শুধুমাত্র ক্যাবল বিছানোর ও তার মেরামতের জন্য।
S M Rimon Nahid