নারীদের জীবনে মাসিক একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে গর্ভধারণের জন্য জরায়ু প্রস্তুত হয় এবং গর্ভধারণ না হলে জরায়ুর গর্ভাশয়ের আস্তরণ রক্তপাতের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ঘটে। কিন্তু যদি এই চক্র অনিয়মিত হয়, তাহলে তাকে অনিয়মিত মাসিক বলা হয়।
কারণ:
অনিয়মিত মাসিকের অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হল:
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোনগুলির ভারসাম্যহীনতা অনিয়মিত মাসিকের কারণ হতে পারে।
- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS): এটি একটি হরমোনজনিত অসুস্থতা যা অনিয়মিত মাসিক, ওজন বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত লোম বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
- গর্ভধারণ: গর্ভধারণের সময় মাসিক বন্ধ থাকে।
- স্তন্যদান: স্তন্যদান করানো মায়েদের মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
- মানসিক চাপ: মানসিক চাপ মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস: দ্রুত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস অনিয়মিত মাসিকের কারণ হতে পারে।
- ঔষধ: কিছু ঔষধ অনিয়মিত মাসিকের কারণ হতে পারে।
- জরায়ুর সমস্যা: জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা অ্যাডেনোমায়োসিসের মতো সমস্যাগুলি অনিয়মিত মাসিকের কারণ হতে পারে।
উপসর্গ:
অনিয়মিত মাসিকের কিছু সাধারণ উপসর্গ হল:
- মাসিকের চক্রের দৈর্ঘ্যে পরিবর্তন: ২১ দিনের কম বা ৩৫ দিনের বেশি সময় পর পর মাসিক হওয়া।
- মাসিকের রক্তপাতের পরিমাণে পরিবর্তন: অতিরিক্ত রক্তপাত বা খুব কম রক্তপাত।
- মাসিকের সময় পেটে ব্যথা: তীব্র পেটে ব্যথা অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ হতে পারে।
- অন্যান্য উপসর্গ: মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, মেজাজ পরিবর্তন ইত্যাদি।
👉 সুস্থ্য থাকার সহজ 10 টি উপায় জেনে নিন 👈
প্রতিকার:
অনিয়মিত মাসিকের প্রতিকার নির্ভর করে এর কারণের উপর। কিছু সাধারণ প্রতিকার হল:
জীবনধারা পরিবর্তন:
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান: ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ, এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ খাবার খান।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুমান: প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- মানসিক চাপ কমান: যোগব্যায়াম, ধ্যান, বা অন্যান্য শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করুন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: আপনার যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে, তাহলে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান মাসিক চক্রকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
- অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন পান কমান: অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
ওষুধ:
- হরমোন থেরাপি: হরমোন থেরাপি মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
- জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং গর্ভধারণ রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
- প্রদাহ-বিরোধী ঔষধ: প্রদাহ-বিরোধী ঔষধ মাসিকের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- অন্যান্য ঔষধ: আপনার অবস্থার উপর নির্ভর করে, চিকিৎসক অন্যান্য ঔষধও লিখে দিতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
অনিয়মিত মাসিক হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চিকিৎসক আপনার অবস্থার কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা দেবেন।
কখন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন:
- যদি আপনার মাসিক ৩ মাসের বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত থাকে।
- যদি আপনার মাসিকের চক্রে হঠাৎ করে অনেক পরিবর্তন হয়।
- যদি আপনার মাসিকের সময় অস্বাভাবিকভাবে বেশি বা কম রক্তপাত হয়।
- যদি আপনি তীব্র পেটে ব্যথা, জ্বর বা অন্যান্য অস্বাভাবিক উপসর্গ অনুভব করেন।
বিঃদ্রঃ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সর্বদা একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ভিন্ন হতে পারে এবং একজন ব্যক্তির জন্য কার্যকর চিকিৎসা অন্যের জন্য কার্যকর নাও হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ