মোটা হওয়া অনেকের জন্যই একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অনেকেই পাতলা শরীরের কারণে আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন না। আবার, কিছু ক্ষেত্রে পাতলা শরীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণও হতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা মোটা হওয়ার সহজ কিছু উপায় শেয়ার করবো।
ওজন কম হওয়ার কারণ
- অপুষ্টি: পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি এবং পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ার ফলে ওজন কমতে পারে।
- ব্যায়াম: অতিরিক্ত ব্যায়াম ওজন কমার কারণ হতে পারে।
- চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণ: থাইরয়েড সমস্যা, ডায়াবেটিস, হজমের সমস্যা, প্যারাসাইট ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের কারণে ওজন কমতে পারে।
- মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ওজন কমার কারণ হতে পারে।
- জিনগত কারণ: কিছু ক্ষেত্রে জিনগত কারণেও ওজন কম হতে পারে।
মোটা হওয়ার ১০ টি সহজ উপায়
মোটা হওয়ার সহজ ১০ টি উপায়
১) ক্যালোরি গ্রহণ বৃদ্ধি
মোটা হওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে আপনার ক্যালোরি গ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। আপনার দৈনন্দিন ক্যালোরির চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত ৫০০-১০০০ ক্যালোরি গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।
কীভাবে ক্যালোরি গ্রহণ বৃদ্ধি করবেন:
- বারবার খাবার: দিনে তিন বেলা নিয়মিত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের মাঝে দুই বেলা এবং রাতের খাবার এবং ঘুমের মাঝে একটি করে হালকা খাবার খান।
- পুষ্টিকর খাবার: খাবারে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। বাদাম, বীজ, মাখন, দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, মাংস, ডিম, ফল, শাকসবজি ইত্যাদি খাবার খান।
- ওজন বৃদ্ধিকারী খাবার: আভোকাডো, কলা, খেজুর, ওটমিল, পনির, মাখন, স্যামন মাছ ইত্যাদি ওজন বৃদ্ধিকারী খাবার খান।
- শক্তিশালী পানীয়: স্মুদি, মিল্কশেক, প্রোটিন শেক ইত্যাদি শক্তিশালী পানীয় পান করুন।
২) নিয়মিত খাবার
দিনে তিন বেলা নিয়মিত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিটি খাবারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্তর্ভুক্ত করুন।
৩) পুষ্টিকর খাবার
খাবারে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
- প্রোটিন: ডিম, মাছ, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম, বীজ ইত্যাদ
- কার্বোহাইড্রেট:
- জটিল কার্বোহাইড্রেট: ব্রাউন রাইস, ওটমিল, আলু, মিষ্টি আলু, শিম, গমের রুটি ইত্যাদি।
- সহজ কার্বোহাইড্রেট: ফল, ফলের রস, মধু, চিনি ইত্যাদি (পরিমিত পরিমাণে গ্রহন করুন)।
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: অলিভ অয়েল, এভোকাডো, বাদাম, বীজ, স্যামন মাছ ইত্যাদি।
৪) ওজন বৃদ্ধিকারী খাবার
নির্দিষ্ট কিছু খাবার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে।
- আভোকাডো: পটাশিয়াম, ফাইবার, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ।
- কলা: প্রাকৃতিক শর্করা, পটাশিয়াম, এবং ফাইবার সমৃদ্ধ।
- খেজুর: প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, ফাইবার, এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ।
- ওটমিল: জটিল কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, এবং প্রোটিনের ভালো উৎস।
- বাদাম মাখন: প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, এবং ক্যালোরিতে সমৃদ্ধ।
- পনির: প্রোটিন এবং ক্যালোরিতে সমৃদ্ধ।
- মাখন: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ক্যালোরিতে সমৃদ্ধ।
- স্যামন মাছ: প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ।
৫) প্রোটিন গ্রহণ
ওজন বাড়ানোর জন্য প্রোটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। প্রতিদিন আপনার শরীরের ওজনের প্রতি কেজিতে ১.৫-২ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের চেষ্টা করুন।
- মাংস, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম, বীজ ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস।
- প্রোটিন গুঁড়া ব্যবহার করেও প্রোটিন গ্রহণ বাড়ানো যায়।
৬) শক্তিশালী পানীয়
স্মুদি, মিল্কশেক, এবং প্রোটিন শেকের মতো শক্তিশালী পানীয় পান করে সহজে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা যায়। এই পানীয়গুলোতে ফল, দুধ, বাদাম, বীজ, এবং প্রোটিন গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা যায়।
৭) ওয়ার্কআউট / ব্যায়াম করা
শুধু খাবার খেলেই মোটা হওয়া যাবে না। নিয়মিত ওয়ার্কআউট করলে পেশী বৃদ্ধি পাবে এবং শরীর সুন্দরভাবে গঠিত হবে।
- ওজন প্রশিক্ষণ: ওজন প্রশিক্ষণ পেশী গঠনে সাহায্য করে, ফলে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
- কম তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম: হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং ইত্যাদি কম তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ওজন বাড়াতে বাধা দেয় না।
৮) পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পুনর্জীবনে সাহায্য করে এবং ওজন বাড়াতেও ভূমিকা রাখে। রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের চেষ্টা করুন। ঘুমের সময় শরীর পেশী গঠন এবং মেরামতের কাজ করে, যা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৯) খাবারের ট্র্যাক রাখুন
আপনি কী খাচ্ছেন এবং কতটা খাচ্ছেন সে সম্পর্কে ট্র্যাক রাখুন। এতে আপনি আপনার ক্যালোরি গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে পারবেন। একটি খাদ্য ডায়েরি রাখুন বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারেন।
১০) ধৈর্য ধারণ
ওজন বাড়ানো একদিনের কাজ নয়। সঠিক খাবার, ব্যায়াম এবং জীবনযাপনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে পারবেন। ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন। ফলাফল পেতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লাগতে পারে।
উপসংহার
উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করে সুস্থ ও নিরাপদে ওজন বাড়াতে পারবেন। তবে, কোনো ঔষধ সেবন বা অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত নয়। ওজন বাড়ানোর আগে কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা। কোনো চিকিৎসা পরামর্শ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়। সঠিক তথ্য এবং নির্দেশনা পাওয়ার জন্য একজন পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
আরো পড়ুনঃ